ইসলামের দৃষ্টিতে রোজার উপকারিতা
২৭ মার্চ ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১২:০২ এএম

পারিভাষিক অর্থে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্তপূণ্যার্জনের উদ্ধেশ্যে যাবতীয় পানাহার, যৌনসঙ্গম কথা ইন্দ্রিয় তৃপ্তিকর কাজ থেকে বিরত ও সংযত থাকার নাম রোজা। এটি ফার্সি শব্দ। এর আরবি প্রতিশব্দ সওম। রোজা পালনের মাধ্যমে খোদাভীতি, আত্মশুদ্ধি, সাম্য, সহানুভূতি ইত্যাদি স˜গুণাবলি অর্জিত হয়। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। কথিত আছে, রোজার মাধ্যমে পেটের যাবতীয় অসুখ এবং ডায়াবেটিসসহ অনেক রোগের প্রতিকার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যৌনসংযমের মতো মহান শিক্ষা লাভ করা যায় রোজার মাধমে। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ, মুকিম , স্থিরমস্তিস্ক মুসলমান নর-নারীর ওপর রমজান মাসের রোজা পালন অবশ্য কর্তব্য বা ফর। অপ্রাপ্ত বয়স্ক, গুরুতর পীড়িত, মুসাফির (ভ্রমণকারী) ও মস্তিস্কবিকৃত কারও ওপর রোজা বাধ্যতামূলক নয়। তবে পীড়িত ব্যক্তি সুস্থতার পর এবং মুসাফির মুকিম হওয়ার পর ভঙ্গকৃত রোজাসমূহের কাজা আদায় করতে হবে।
গর্ভবতী মহিলারা যদি গর্ভস্থ সন্তানের এবং নবপ্রসূতি মায়ের যদি দুগ্ধপোষ্য সন্তানের জীবনের আশঙ্কা দেখা দেয়, তবে পীড়িত ব্যক্তির মতো তারা আপাতত রোজা ভঙ্গ করবেন এবং পরে সুবিধামতো সময়ে কাজা সমাপন করবেন। এটাই রোজার ব্যাপারে শরিয়তের বিধি-বিধান।
ইসলাম কারও উপর অন্যায়ভাবে কোনও কর্ম চাপিয়ে দেয় না। শরীরের সার্বিক উন্নতির জন্য রোজা কর্মসূচি পালন হয়। শিশু, রোগী, ভ্রমণকারী, দুগ্ধবতী মা, গর্ভবতী মহিলার জন্য শর্ত সাপেক্ষে রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। রোজা কোনও অবস্থাতেই শরীরের জন্য অভিশাপ নয়, বরং স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে আশীর্বাদস্বরূপ।
সেহরি ও ইফতারের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা-সেহরি খাওয়ার পরই রোজার সূচনা হয়। সেহরি রোজার একটি অঙ্গ। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেন, ‘ তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরির মধ্যে বরকত রয়েছে।’ (মুসলিম, বোখারি)। পয়গম্বর মোহাম্মদ শেষ রাতে পানাহার করতেন এবং সুবহে সাদিক থেকে রোজা রাখতেন। কুরআন শরিফে খাওয়ার সময়সীমা সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, দেরি করে সেহরি খাওয়া এবং দেরি না করে ইফতার খাওয়ার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। এই দিকনির্দেশনার মধ্যেও স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে উপকার রয়েছে। যেমন দেরিতে সেহরি খেলে দিনে ক্ষুধা-পিপাসার অনুভূতি কম হয়। মহানবী (সাঃ) খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করতেন। খেজুরের মধ্যে রয়েছে সুগার, আয়রন, লবণ ও ভিটামিন যা হজমে সাহায্য করে এবং মস্তিস্কে গ্লুকোজ সরবারহ করে। ফলে রোজাদার প্রশান্তিঅনুভব করেন, স্নায়ূতন্ত্র ঠান্ডা হয় এবং কর্মতৎপরতা বাড়ে। খেজুরের অনুপস্থিতিতে পানি পান করে ইফতার বা রোজা ভঙ্গ করা সুন্নত। পানি প্রথমত পিপাসার আগুনকে নিভিয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, পানিতে রয়েছে খনিজ পদার্থ, লবণ, সোডিয়াম ইত্যাদি, যা শরীরের জন্য দারুণ উপকারী।
স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে রোজার গুরুত্বÑরোজা পালন শুধু ধর্মীয় উপকারিতার জন্য নয়, এতে দৈহিক মানসিক ও সামাজিক উপকারিতাও রয়েছে। পাকস্থলি থেকে শরীরকে রোগ থেকে নিরাময় করে। এটা দৈহিক উপকারিতা। রোজা মানুষের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করে। ধৈর্যশীল ও অধ্যবসায়ী হতে সাহায্য করে। রোজা কঠিন অভ্যাসে অভ্যস্ত করে। রোজা মানুষকে উদার করে তোলে।
রোজা রাখলে জৈব বিষ ধ্বংস হয়। শরীরে এটা বেশি থাকা ক্ষতিকর। রোজার মাধ্যমে রক্ত বিশুদ্ধ হয়। রোজা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এমনকী অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সার প্রতিরোধও করে। শরীরে অতিরিক্ত চর্বি কমানোর জন্য চিকিৎসকরা কম খাওয়া এবং উপবাস থাকার পরামর্শ দেন। ফলে রোজা রাখলে ওজন ও মেদ কমে এবং আলঝাইমার্স রোগ থেকে বাচাঁ যায়। বিভিন্ন ইসলামি গ্রন্থে বলা হয়েছে, রোজা ডায়াবেটিস রোগের জন্য বিরাট রহমত । কম খাদ্যগ্রহণ এবং দীর্ঘ সময় খাদ্য গ্রহণ না করায় রক্তে শর্করার পরিমাণকমে আসে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত থাকে। যে-সব ডায়াবেটিস রোগী ডায়েট কন্ট্রোলে সুস্থ আছেন, তাদের জন্য রোজা এক বিরাট নিয়ামত। রোজা রাখলে দাঁত ও মাড়ি মজবুত হয়। বিরতি লাভ করায় দাঁতের ব্যথা বেদনাও দূর হয়। রোজা অবস্থায় পাকস্থলিতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড সবচেয়ে কম পাওয়া যায়। ফলে গ্যাসট্রিক বাড়ে না।
গবেষণায় দেখা গেছে, নামাজে শরীরের সব জয়েন্ট ও মাংসপেশি দাঁড়ানো, রুক, সিজদা ও বসার মধ্যে অংশ নেয়। ফলে রক্ত চলাচলে নামাজ খুবই উপকারী। রমজানে তারাবির নামাজে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানোর ফলে মেরুদন্ডসহ অন্যান্য জয়েন্টকে ক্রিয়াশীল করে। রোজার মাধ্যমে যৌনরোগ নিয়ন্ত্রিত থাকে। ফলে এইডস প্রতিরোধেও রোজার ভূমিকা রয়েছে। মিশরের চিকিৎসকরা যৌনরোগ নিরাময়ে রোজা পালনের নির্দেশ দেন। রোজার মধ্য দিয়ে ধূমপান, চা, কফির মতো উত্তেজক সামগ্রী অধিক মাত্রায় সেবন থেকে বিরত থাকা যায়। ফলে স্নায়ূতন্ত্র শান্তথাকে।
প্রখ্যাত মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনা যে কোনও পুরনো জটিল রোগ থেকে মুক্তির জন্য রোজার নির্দেশ দিতেন। জার্মানির ডাক্তার ফেডারিক হফম্যান (মৃত্যু ১৭২৪ খ্রিঃ) বলেন, রোজার মাধ্যমে মৃগীরোগ ও আলসারের চিকিৎসা করা যায়। সুতরাং রোজার উপকারিতা অপরিসীম। সামর্থবান ও রোজা রাখতে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমানের জানা উচিত যে রোজার মধ্যে সার্বিক কল্যাণ রয়েছে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

হিন্দুদের কাছ থেকে মুসলিমদেরকে ধর্মীয় শৃঙ্খলা শেখা উচিত : যোগী আদিত্যনাথ

দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে সরকার অবশ্যই হার্ডলাইনে যাবে

মানবিক সহায়তাকর্মীদের জন্য গাজা বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান: যুক্তরাজ্য

লোহাগাড়ার জাঙ্গালিয়ায় তিন দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালো ১৩ জন

হবিগঞ্জের বাহুবলে ১২ গ্রামের সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত অর্ধশত

ইসরাইলের কাছে বড় ধরনের অস্ত্র বিক্রি বন্ধে মার্কিন কংগ্রেসে বিল

যুক্তরাষ্ট্রের রণতরীতে আবারও হামলা ইয়ামেনের

কাল থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

বরিশালের উজিরপুরে যুবক-যুবতিকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহত ২৭০০ ছাড়াল

৩২ শহীদ পরিবারের সঙ্গে জামায়াত আমিরের ঈদ উদযাপন

ঘিবলি ট্রেন্ডে গা ভাসিয়েছেন? দেখুন কোন বিপদ ডেকে এনেছেন আপনি!

জাপানে মেগা ভূমিকম্পের শঙ্কা, ৩ লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা

গাজীপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাইভেটকার চালকের মৃত্যু

লোহাগড়ায় ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ

পাকিস্তানকে উড়িয়ে সিরিজ নিউজিল্যান্ডের

মির্জাপুরে মসজিদের ইমামের রাজকীয় বিদায়

মধ্যপ্রাচ্যে আরও বিমানবাহী রণতরী পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, উত্তেজনা বাড়ছে

লোহাগাড়ায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ১০

বাংলাদেশ নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের ওই প্রতিবেদনে যা ছিলো